
সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী এর জীবনী | Alauddin Khalji Biography in Bengali
সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী এর জীবনী | Alauddin Khalji Biography in Bengali
নমস্কার বন্ধুরা আজকের পোষ্টে আমরা জানবো আলাউদ্দিন খিলজী এর সম্পর্কে। আলাউদ্দিন খিলজী যিনি ছিলেন খিলজী বংশের দ্বিতীয় শক্তিশালী শাসক এবং তিনি দিল্লীতে বসে ভারতীয় উপমহাদেশে খিলজির শাসন পরিচালনা করেছেন এবং যাকে বিবেচনা করা হয় খিলজী রাজ বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আলাউদ্দিন খিলজী চেয়ে ছিলেন।
ভারতীয় ইতিহাসে একজন আরেকজনের মত শক্তিশালী শাসক থাকুক আর তিনি সেরকম চেষ্টা করেছিলেন। বিভিন্ন সভায় তিনি নিজেকে দ্বিতীয় আলেকজান্ডার হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। এমনকি ঐতিহাসিক গণ তাকে দ্বিতীয় আলেকজান্ডার হিসেবে উল্লেখ করার প্রয়াস পেয়েছেন।
তিনি নিজেকে দ্বিতীয় আলেকজান্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজের মুদ্রায় এবং জুমার নামাজের খুতবায় তার কৃতিত্ব বর্ণনার আদেশ দিয়েছিলেন। আলাউদ্দিন খিলজির ৪ ই জানুয়ারী ১২৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তার পিতা হসেন শিহাব উদ্দিন খিলজি যিনি ছিলেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। জালালুদ্দিন খিলজী এর বড় ভাই আর এই সম্পর্কের দিক থেকে আলাউদ্দিন খিলজী ছিলেন সুলতান জালালুদ্দিন খিলজী এর ঘাতের সূত্র এমনকি পরবর্তীতে সুলতান জালালুদ্দিন খিলজী তার মেয়েকে আলাউদ্দিন খিলজী এর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।
১২৯০ সালের দিকে আলাউদ্দিন খিলজী কে অভিহিত যুগ পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এরপর ১৯৯১ সালে একটি বিদ্রোহ দমন করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জালালুদ্দিন খিলজী আলাউদ্দিন উপাধি প্রদান করেন এবং এরপর তাকে কারা গভর্নর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
১৯৯১সালে জালালুদ্দিন খিলজী তার ভাতিজা আলাউদ্দিন খিলজির হাতে কানপুরে নিকটবর্তী একটি অঞ্চল অঞ্চলের শাসনভার তুলে দেন। ১২৯৬ সালে আলাউদ্দিন খিলজী জালালুদ্দিন খিলজী কাছ থেকে উত্তর প্রদেশ দখল করে শাসন শুরু করেন।
১২৯৬ সালে অবরোধ করেন এবং জালালউদ্দিনের বিপুল পরিমাণ সম্পদ তিনি নিজের দখলে নিয়ে নেন জালালুদ্দিন খিলজী কে হত্যা করে তিনি নিজে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে জালালউদ্দিনের ছেলের কাছ থেকে মুলতানে দখল করে নেন।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আলাউদ্দিন খিলজী বেশ কিছু অঞ্চল কে নিজের ভারতীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে অন্তর্গত করেন। তার কথাগুলো সব হলো অভিযানের মাঝে বিখ্যাত অভিযানগুলো হলো যারা নতানকি দিল্লি এবং উত্তর প্রদেশ।
১৩০৬ সালে তাঁর সহকর্মীদের কাছ থেকে একটি সফল অভিযান শেষে রাবি নদী উপত্যকা দখল করে নেয় এবং বর্তমানের আফগানিস্তান দখল করে নেয়। যে সকল সেনাপতি মঙ্গোলীয়দের বিপক্ষে তাদের সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তাঁরা হলেন সেরা অধ্যক্ষ জাফর খান।
সেনাপতি উলুখাগড়া একসময়ের গোলাপ কিন্তু পরবর্তী সময়ের জেনারেল মালিক কাফুর। আলাউদ্দিন খিলজী খুব ছোটবেলা থেকেই রাজ্য জয়ের ব্যাপারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। গ্রীক বীর আলেকজান্ডার মধু তৃতীয় বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখতেন, কিন্তু কাজিয়াল গোলকের পরামর্শে তিনি এই অসম্ভব পরিকল্পনা ত্যাগ করে।
সারা ভারতজুড়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্ব জয়ের পরিকল্পনায় ত্যাগ করলেও তিনি তার মুদ্রায় নিজেকে দ্বিতীয় আলেকজান্ডার হিসেবে উল্লেখ করতেন। ভারতের স্থাপনের পাশাপাশি তিনি উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে মঙ্গল আক্রমণের হাত থেকে ভারতকে রক্ষা করেছিলেন।
যে ব্যাপারে তাকে অবশ্যই বিশেষ কৃতিত্বের দাবীদার হিসেবে উল্লেখ করা যায়, প্রথমে তিনি ভারতের গুজরাটের রাজা কোন রাজপুত নেতা আহমেদের রাজাকে পরাজিত করেন। এরপর তিনি মালিক কাফুর নেতৃত্বে দক্ষিণ ভারত অভিযান করেন।
কাপুর দেবগিরি রাজা রামচন্দ্র বরং জাতীয়তাবোধ সমুদ্রের তৃতীয়বার লাল কে পরাজিত করার পর সুযোগ নিয়ে পান্ডু রাজ্য করেন, এরপর তিনি রামেশ্বর পর্যন্ত অগ্রসর হন। আলাউদ্দিন খিলজী অবশ্য দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি সরাসরি সাম্রাজ্যভুক্ত না করে সেখানে তাদের মৌখিক আনুগত্য ও তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েই করদরাজ্য হিসেবে পরিণত করতেন।
বিজেতা হিসেবে আলাউদ্দিন খিলজী ছিলেন দিল্লির সুলতানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। সাহেবের মতে তাঁর রাজত্বের সঙ্গে সঙ্গেই সুলতানি সাম্রাজ্যবাদের সূত্রপাত হয় তার আমলেই প্রথম দক্ষিণ ভারতের সুলতানি সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটে।
বিজেতা হিসেবে অনেকে তাকে আকবরের সঙ্গে তুলনা করেন। আলাউদ্দিনের গৃহদাহ তারা সহযোগিতা বলে যুদ্ধ কৌশলের কারণে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। এক নজরে যদি আলাউদ্দিন খিলজী এর শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে ধারণা নিতে চাই তাহলে যে বৈশিষ্ট্যগুলো বিশেষভাবে নজরে আসে।
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা সাম্রাজ্যঃ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আলাউদ্দিন খিলজী প্রশাসনিক সংস্কারের দিকে বিশেষভাবে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূর্তপ্রতীক কেন্দ্রীয় স্বৈরাচারী শাসন কে শক্তিশালী করার জন্য তিনি সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে তোলেন। তিনি প্রথম একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
তিনি সবসময় একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থার বিশ্বাসী ছিলেন কথাপ্রসঙ্গে একবার তিনি উদ্দিনকে বলেছিলেন আমি সেইসব নির্দেশ জারি করি যারা রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করে এবং জনগণের মঙ্গল সাধন করে আমি জানিনা কোনটা বৈধ-অবৈধ রাষ্ট্রের পক্ষে মঙ্গলজনক।
আমি তাই করি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ আলাউদ্দিন খিলজী সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করেছিলেন এবং অল্প দামি জিনিসপত্র কিনতে পারেন, তার জন্য বাজারদর ব্যবস্থা সবসময় নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।
অফ দিল্লী সুলতানের মধ্যে সর্বপ্রথম ভূমি কাজ শুরু করেছিলেন দেশে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে সেদিকেও তিনি অপরাধীদের শাস্তির বিধান দেয়া হতো। তিনি দেশের সমস্ত খবরা খবর রাখতেন আলাউদ্দিন খিলজী সম্পর্কে।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের প্রকাশ এবং প্রচার দেখা যায় যার মধ্যে অন্যতম দুটি আলোচিত অপবাদ হচ্ছে সমকামিতার অপবাদ এবং রানী পদ্মাবতীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক আলাউদ্দিন খিলজী উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং শাসক হলেও তিনি অনেক ইসলামিক মনোভাবসম্পন্ন ছিলেন এবং তিনি সমকামী ছিলেন না।
বরং তার শাসন ব্যবস্থার সময় ভারতীয় উপমহাদেশে সমকামিতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, আর তার উপর এই সমকামিতার অপবাদ দিয়ে থাকে ইউরোপিয়ান সূত্রগুলো এবং তাদের ঐতিহাসিকগণ এর অন্যতম।
কারণ হচ্ছে সুলতানের জীবনে সেনাপতি মালিক কাফুরের বেশ ভালো প্রভাব ছিলো আর এই কারনেই ইউরোপিয়ান সূত্রগুলো নিজেদের মনগড়া ধারণা পোষণ করে। যে সুলতান সমকামী ছিলেন দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে রানী পদ্মাবতীর সাথে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী এর প্রেমের সম্পর্ক।
প্রথম অভিজিৎ আরোহী তুহিন এর অন্যতম কারণ হচ্ছে যে চিতোরের রানী পদ্মাবতীর সাথে আলাউদ্দিন খিলজির যে প্রেমের সম্পর্ক প্রচলিত আছে সেটি হচ্ছে সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি গল্প ঐতিহাসিক ভাবে এর কোনো সত্যতা নেই।
মূলত সর্বপ্রথমে প্রেমের সম্পর্কের উল্লেখ্য যেখানে পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে মালিক মোহাম্মদ জায়সী নামের কোভিদ লেখা একটি কবিতা পদুমাবৎ। এছাড়াও এর প্রায় এক শতাব্দী পর আরাকান রাজ দরবারের সভাসদ কবি আলাওল এই পদুমাবৎ অনুবাদ করেছিলেন আর এই প্রেমের সম্পর্কের।
উল্লেখ এই কবিতা ছাড়া আর কোন ঐতিহাসিক গ্রন্থে পাওয়া যায় না অবশেষে দিল্লি সালতানাতের এর শ্রেষ্ঠ শাসক সমস্ত হিন্দুস্তানকে স্ক্স্যন্সসে ২০ বছর শাসন করার পর ১৩১৬ সালের ৪ ই জানুয়ারি পরলোকগমন
উপসংহার
এই পোস্টে, আমরা আপনাকে “ সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী এর জীবনী | Alauddin Khalji Biography in Bengali ” -এর সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে, আর ভালো লাগলে পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আপনার যদি এই পোস্ট সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন থাকে তবে আপনি আমাদের কমেণ্ট বক্সের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।