
ডঃ বি. আর. আম্বেদকর এর জীবনী | Dr B.R. Ambedkar Biography Bengali
নমস্কার বন্ধুরা আজকের পোষ্টে আমরা জানবো ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (Dr B.R. Ambedkar ) সম্পর্কে। ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি একজন দলিত আরব শ্রেনীভুক্ত হয়ে সারা জীবন সংগ্রাম করে সমস্ত দলিত শোষিত মানুষদের জন্য সুবন্দোবস্ত করে গেছেন।
তারই উদ্যোগে ভারতের শ্রেণীর মানুষদের উন্নয়নের জন্য ভারতীয় শাসনতন্ত্রের নানাবিধ নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে নিজের সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি একটা জিনিস বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন । যে দেশের উন্নতি না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো দেশের মানুষের মধ্যে এই প্রভাব ভারত আর ভারতবাসীর উন্নতিকে নিশ্চিত করতে হলে সমাজে মূল তিনটি আদর্শকে রূপ দিতে হবে সেটা হল ব্যক্তি স্বাধীনতা সাম্য আর মৈত্র।
ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের চিন্তাভাবনা
চতিনি নিজে একজন অস্পৃশ্ব শ্রেণীর মানুষ ছিলেন তাই মানুষের নিচুতলার এই সমস্ত মানুষগুলোর ব্যথা-বেদনা তিনি বুঝতেন আর তাই তিনি ভারতের সমাজের তথাকথিত সংস্কারের চিন্তায় আবদ্ধ থাকতে পারেনি । তিনি সব সময় প্রচলিত কাঠামো ভেঙে নতুন একটা সমাজ গড়ার কথা ভাবতেন আম্বেদকর এমন একটা সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে মানুষের সাথে মানুষের কোন ভেদাভেদ থাকবে না সেখানে সবাই হবে স্বাধীন মনোভাবাপন্ন বাৎসমান।
আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্রাহ্মণ উচ্চবর্ণের মানুষদের একটি বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার ব্যাপার চলে আসছে, আর এই কারণে সমাজে ভেদাভেদ নামে একটা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে । আর অবিলম্বে যদি এই মারাত্মক ক্ষত তাকে সারাবার ব্যবস্থা না করা যায় তাহলে পুরো জাতির ধ্বংস হয়ে যাওয়া আর কেউ আটকাতে পারবেনা।
এটা আম্বেদকর বেশ ভালোভাবেই বুঝেছিলেন আর তাই তিনি শুধুমাত্র দলিত মানুষদের উন্নতি করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন তা নয় । তিনি সমগ্র ভারতের উন্নতি করতে চেয়েছিল এবারে আমরা ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জেনে নেব।
ভারতের সমাজ আর রাজনীতিতে আম্বেদকরের ভুমিকা
ভারতের সমাজ আর রাজনীতিতে নবজাগরণের প্রধানতম সৈনিক মহান মানবতাবাদী’ ডঃ বি. আর. আম্বেদকর 1891 সালের 14 এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের ছোট মৌ শহরে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন ছিলেন তাঁর পিতা মৌ সোনা নিবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন অত্যন্ত সরল ধর্মপ্রাণ ছিল।
ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত কঠিন জীবন সংগ্রামে অংশ নিয়ে সফলতা অর্জন করে চলতে হয়েছে কারণ আমাদের হিন্দু সমাজের নিচু জাতের মানুষদের অত্যন্ত ঘৃনার চোখে দেখা হতো যখন চাকরি থেকে অবসর নেন। তখন আম্বেদকর এর বয়স মাত্র 2 বছর 3 মাস 150 টাকা পেনশন নিয়ে সপরিবারে চলে আসেন তাদের আদি বাসভূমি কঙ্কনের দিতে আর তার দাদা এখানে একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন।
কিন্তু সেই স্কুলের পরিবেশ ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয় আর জঘন্য এই দুই ভাই অন্য ছাত্রের সাথে ক্লাস ঘরে বসতে পারত না। তারা বই খাতা নিয়ে ক্লাস ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতো কারণ তারাতো মহারাজাদের ছেলে প্রথম দিনই সেখানকার শিক্ষক মশাই ক্লাসে ঢুকে তাদের কে বলেছিলেন তারা নিজেদের আনা চটের আসন বিয়ে বসবে।
দেওয়ালের অন্যদের থেকে তাদের বসার স্থান যেন দূরে হয় যেন কারো ছোঁয়া না লাগে এমনকি তাদের সিলেটবার্তা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতেন না দূর থেকে সিলেট খাতার লেখা দেখতেন। স্কুলের সমস্ত ছাত্রের জন্য কলসিতে খাবার জল থাকতো কিন্তু ভীম ও তার নিজের হাতে জল নিয়ে খেতে পারত না, যদি তাদের তৃষ্ণা পেত তাহলে তারা হা করতো তখন কোন জাতের ছেলে উপর থেকে তাদের মুখে জল ঢেলে দিত স্কুলের পরিবেশ দ্বারা ভেদাভেদের হাত থেকে রেহাই পেত না।
বাজারের যে সেলুনে চুল কাটে ওরা সেখানে চুল কাটতে পারত না, বাধ্য হয়ে ওদের বাড়ির বোনেরাই ছোট ভাইদের চুল কাটত। আম্বেদকর এর যখন মাত্র 6 বছর বয়স তখন তার মা মারা যান সেই সময় তাদের একমাত্র বিধবা পিসি মীরাবাঈ এসে মা হারা এই ছেলে মেয়ে গুলোকে দেখাশোনার ভার নেন।
তিনি আম্বেদকরকে অত্যন্ত ভালবাসতেন নিজের চেষ্টায় মারাঠি ইংরেজি ভাষা রীতিমতো দক্ষতা অর্জন করেছিলেন আর তিনি চাইতেন যে সমস্ত ছেলেদের মধ্যে ছোট বয়স থেকে এমন প্রসার ঘটুক স্কুলের মধ্যে থেকেও ছেলেরা শিক্ষার উপকারিতা আনন্দ পেতে পারে সে বিষয়ে তিনি অত্যন্ত যাচ্ছিলেন।
তিনি নিয়মিতভাবে নিজের ভাই দুটিকে পড়াতেন ছেলেমেয়েদেরকে রোজ রামায়ণ-মহাভারত সন্ত কোভিদ অন্যান্য রচনা জীবনী পড়ে পড়ে শোনাতেন। শুধু তাই নয় তিনি ছেলেদেরকে ইংরেজি পড়তে আর ইংরেজি অনুবাদ করতে শিখিয়েছিলেন পরবর্তীকালে আম্বেদকর বলেছিলেন যে তিনি পিতার কাছে প্রাথমিকভাবে ইংরেজি ভাষা শিখেছিলেন।
এমনকি তিনি তাকে ইংরেজি অনুবাদ করা ভালোভাবে রপ্ত করেছিলেন এরপর প্রাথমিক স্কুলে পড়া শেষ হলে আম্বেদকর আর তার দাদা আনন্দ হাই স্কুলে এসে ভর্তি হলেন। সেই সময় এই স্কুলে একজন শিক্ষকের পদ ছিল আম্বেদকর তিনি ডঃ বি. আর. আম্বেদকর কে অত্যন্ত ভালবাসতেন আর তাকে নানাভাবে সাহায্য করতেন।
আর তখনকার সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী আমদাবাদ গ্রামের অধিবাসী হিসেবে ভীমের পরিবারেও পদবী ছিল আম্বেদকর কিন্তু এই স্কুলের খাতায় ভীমের পদবী বদল করে নিজের পদবী আম্বেদকর লিখে দিলেন পরিচিত হন। আরো একটি ঘটনা বলে রাখা দরকার সেটি প্রমাণ করে সেই সময়কে প্রত্যেকদিন বাধা করতে হতো আর দাদা।
হাই স্কুলের ছাত্র গোরেগাঁও এসেছিলেন বাবার সাথে দেখা করতে সে সময় একটা চাকরি নিয়ে গরেগাওন থাকতেন। দুই ভাইয়ের নাম লোক তারপর তারা একটা গরুর গাড়ি ভাড়া করে বাবার বাড়ির দিকে রওনা হল।
পথে যেতে যেতে কারণ জানতে পারল আরোহী দুই ছেলে জাতিতে বাহার সাথে সাথে গাড়োয়ান অত্যন্ত রেগে গেল ওরা উঠাতে নাকি তার গাড়ির অপবিত্র হয়ে গেছে এই অপবাদ দিয়ে তাদের গাড়ি থেকে মাটিতে ফেলে দেয়।



অনেক অনুরোধ করার পর সে রাজি হয় ওদের পৌঁছে দিতে তবে শর্ত থাকে যে তাকে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হবে আনন্দকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে ছেলেদের সাথে গাড়োয়ান তো আর এক গাড়িতে যেতে পারে না।
তাই সে হেঁটে হেঁটে গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে যাবে তারপর অবশ্য সে বিধান অনুসারে গাড়িটাকে পবিত্র করে নেই। তারপর সেদিন সন্ধ্যে থেকে মাঝরাত অবধি গোরেগাঁও পৌঁছানো পর্যন্ত রাস্তায় কারো সাহায্য পায়নি এমনকি পিপাসা মেটাবার জন্য তারা জলপান ও করেনি। এর কিছুদিন পর আরেকটি নতুন চাকরিতে বম্বে চলে আসেন। সেখানে ডঃ বি. আর. আম্বেদকর আর তার দাদা এনফিল্ড হাই স্কুলে ভর্তি হন।
ছোট থেকে প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে মানুষ হয়েছে তাই স্বাভাবিক কারণ এই সমস্ত ঘটনা ভীমের সচেতন মনে গভীরভাবে রেখাপাত করল নতুন জায়গায় একটা বস্তি এলাকায় ছোট্ট একটা ঘরে পুরো সংসার নিয়ে বাস করতেন সেখানে রান্না-খাওয়া সব কিছুই একটা ঘরে হত এর উপর একটা ছাগল ছিল। তাদের এর মধ্যে আর কোথায় পড়াশোনা করা যায় অনেক ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করল।
প্রথমদিকে ভীম রাত দুটো অবধি ভূমিনীতি তখন নিজেকে থাকতেন তিনি বিদেশে পড়াশোনা করতে পারে তিনি নিজে ভিমেট জায়গায় ঘুমিয়ে নিতেন তখন থেকে ভোর অবধি পড়াশুনা করতেন খেলাধুলাতেও স্কুলে সবার সেরা ছিল তিনি ফুটবল দলের অধিনায়ক।
কিন্তু সেখানেও জাতিভেদের অভিশাপ তাকে ঘিরে থাকত সেখানেও তাকে ক্লাসে আলাদাভাবে বস্তুত তিনি ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে পারতেন না কারণ ব্ল্যাকবোর্ডের পিছনে অন্য ছেলেদের টিফিন বক্স থাকতো যদি তিনি উচ্চ জাতের ছেলে হয়ে সেটা ছুয়ে দেখ তাহলে খাবারগুলো অপবিত্র হয়ে যাবে। তিনি নিজের ছেলে বলে তার দেব ভাষা সংস্কৃত পর আবার কোন অধিকার ছিল না বাধ্য হয়ে তাকে পড়তে হয়েছে।
পরদিনই নিজের চেষ্টায় সংস্কৃত শেখেন আম্বেদকর পরবর্তী জীবনে হিন্দু ধর্মের গ্রন্থ গুলি অত্যন্ত মন দিয়ে পড়াশোনা করে চিন্তিত মতামতগুলি লিখে রেখে গিয়েছিলেন তার লেখা থেকে আমরা জানতে পারি যে কেমন ভাবে উঁচু জাতের হিন্দুরা ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্য যাত্রীরা করেছে আম্বেদকর এলফিনস্টোন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন 1960 সালে।
এই ঘটনা সমাজে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করে আর তাই আম্বেদকর কে বোম্বে শহরে একটি সবাইকে অভিনন্দন জানানো হয়। অনেক ঘাত প্রতিঘাত এসেছিল কিন্তু সব পেরিয়ে তিনি উচ্চশিক্ষায় অগ্রসর হতে থাকেন তিনিও আর দলিত শ্রেণীর মানুষের উন্নতির চেষ্টা করতে থাকেন।
ভারতীয় এই সময়ে দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছিল ভারতের বড়লাট হয়ে আসেন মাউন্টব্যাটেন তিনি ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করবার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করে হাজার 1947 সালের 15 জুলাই থেকে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম নেয়। ভারত আর পাকিস্তান স্বাধীনতা ভারতকে সুসংগঠিত করার জন্য দক্ষ অভিজ্ঞ দেশের নেতারা একটা নতুন জাতীয় প্রশাসন গঠন করে আর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর অনুরোধ রক্ষা করার জন্য আম্বেদকর ভারত সরকারের আইন বিভাগের দায়িত্ব নেন।
ভারতের সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি প্রস্তুত হয় এই সভার সভাপতি হন তিনি চেষ্টা করে 141 দিন দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রস্তুত করলেন পৃথিবীর বৃহত্তম সংবিধানের খসড়া অবশেষে অনেক বিচার-বিবেচনা করার পর হাজার 1949 সালের 26 শে নভেম্বর ভারতের সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়।
সংবিধানের 395 টি অনুচ্ছেদ আর চারটি তালিকা আমাদের ভারতীয় সংবিধানে শ্রেণীর উন্নতির জন্য যে সমস্ত বিধানকে গ্রহণ করা হয়েছে এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেডকর অবশেষে 1956 সালের 6 ডিসেম্বর তাঁর জীবনাবসান হয়।
উপসংহার
এই পোস্টে, আমরা আপনাকে “ ডঃ বি. আর. আম্বেদকর এর জীবনী | Dr B.R. Ambedkar Biography Bengali ” -এর সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে, আর ভালো লাগলে পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আপনার যদি এই পোস্ট সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন থাকে তবে আপনি আমাদের কমেণ্ট বক্সের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
One Comment