
১. পৃথিবীর গতি কয় প্রকার ও কি কি ?
পৃথিবীর গতি হল দুই প্রকার। যথা – (১) আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি (২) বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি
২. সৌর জগতের গ্রহের নাম ও প্রকার সমন্ধে লেখো ?
সৌর জগতে পৃথিবী সহ মোট ১৩ টি গ্রহ রয়েছে। যার মধ্যে ৮ টি হল কুলিন গ্রহ এবং ৫ টি বামন গ্রহ। কুলিন গ্রহগুলি হল – বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার, শনি, ইউরোনাস, নেপচুন, এবং বামন গ্রহ গুলি হল- সেরেস, প্লুটো, হার্ডমেয়া, মাকিমাকি এবং এরিস।
৩.প্লুটোকে বামন গ্রহ বলা হয় কেন?
২০০৬ সালের জ্জড্ড প্লুটোকে বামন গ্রহ বলে চিহ্নিত করে কারন প্লুটো তার কক্ষপথের নিকটস্থ থেকে মহাজাগতিক বস্তুকে সরিয়ে ফেলতে পারে না।
৪. গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল মহাবিশ্ব সম্পর্কে কি ধারণা দিয়েছিলেন?
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল প্রথম পৃথিবীকেন্দ্রিক ধারণার সপক্ষে মত দেন। তার মতে, মহাবিশ্বের মাঝখানে রয়েছে স্থির পৃথিবী এবং এই পৃথিবীর চারপাশে অবস্থিত ৫৫টি পূর্ণবৃত্ত কক্ষপথে চাঁদ, অন্যান্য গ্রহ ও নক্ষত্ররাজি প্রদক্ষিণ করে চলেছে।
৫. নিকোলাস কোপারনিকাস মহাবিশ্ব সম্পর্কে কি মত প্রকাশ করেন?
পােলান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস তাঁর গ্রন্থ ‘De Revolutionibus’-এ প্রথম উল্লেখ করেন। যে মহাবিশ্বের ভরকন্দ্র সূর্যকেন্দ্রিক। অর্থাৎ সুর্যকে মাঝখানে রেখে পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ ও উপগ্রহ পরিক্রমন করছে।
৬. জোহান্স কেপলারের মহাবিশ্ব সম্বন্ধে ধারণা কি ছিল?
জোহান্স কেপলার, কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের পক্ষে মত দেন, এবং তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন যে, সকল গ্রহগুলির কক্ষপথ উপবৃত্তাকার এবং কক্ষপথের দুটি নাভির একটিতে রয়েছে সূর্য।
৭. আইজ্যাক নিউটন কর্তৃক সূত্রটি কি?
আইজ্যাক নিউটন হলেন ইংল্যান্ডের পদার্থবিদ গণিতজ্ঞ। তিনি তাঁর ‘Principia’ গ্রন্থে মাধ্যাকর্ষন শক্তির কম প্রথম বলেন এবং ব্যাখ্যা দেন যে মহাবিশ্বে প্রতিটি বস্তু প্রতিটি বস্তুকে আকর্ষণ করছে এবং এই আকর্ষণের প্রভাবেই সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহ, উপগ্রগুলি ঘুরছে।
৮. আবর্তন গতি কাকে বলে?
পৃথিবী তার কক্ষতলের সঙ্গে ২৩ ১/২ কোণে হেলানো অবস্থায় নিজের অক্ষের চারিদিকে পশ্চিম থেকে – পূর্ব দিকে অবিরত পাক খেয়ে চলেছে। একেই পৃথিবীর আবর্তন গতি বলে। পৃথিবীর এই আবর্তনে সময় লাগে ২৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট ৪ সেকেন্ড।
৯. আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উড়ে যাই না বা পড়ে যাই না কেন?
পৃথিবীর আবর্তন গতি থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে দূরে উড়ে যাই না তার কারণ হল—
(i) পৃথিবীর অভিকর্ষজ শক্তিঃ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের দ্বারা ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। ফলে আমরা পৃথিবীর বিবর্তন গতি থাকা সত্ত্বেও বাইরে ছিটকে যাই না।
(ii) গতি সমানঃ পৃথিবীর আবর্তন গতির সঙ্গে সমান গতিতে আমরাও পৃথিবীর সঙ্গে ক্রমাগত ঘুরে চলেছি। ফলে আমরা ছিটকে বেরিয়ে যাই না।
১০. আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি অনুভব করতে পারি না কেন?
আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি বুঝতে পারি না, তার কারণ হল-
(1) সমান গতিঃ পৃথিবীর আবর্তন গতির সঙ্গে আমরাও অনবরত পৃথিবীর সাথে ঘুরে চলেছি। এর ফলেই, পৃথিবীর
আবর্তন গতি আমাদের পক্ষে বােঝা সম্ভব নয়।
(2) মাধ্যাকর্ষণ শক্তিঃ পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ বলের দ্বারা মানুষ, জীবজন্তু ও যাবতীয় বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের দিকে
আকর্ষিত করে। তাই কোনােভাবেই পৃথিবীরগতি বােঝা যায়না।
(3) ক্ষুদ্রাকার আকৃতিঃ পৃথিবীর আয়তন অপেক্ষায় আমরা আতই ক্ষুদ্র যে আমাদের পক্ষে পৃথিবীর আবর্তন গতি বোঝা সম্ভব নয়।
১১. পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ কখনও বাড়ে ও কখনাে কমে কেন?
জুলাই মাসে পৃথিবীর অপসূর অবস্থানের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্ব বেশী থাকে, প্রায় ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি এবং জানুয়ারী মাসে পৃথিবীর অনুসূর অবস্থানেরজন্য পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব সবথেকে কম থাকে প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিম। এই অপসূর অবস্তানে পৃথিবীর দূরত্ব বেশি থাকার জন্য পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ হ্রাস পায় ও অনুসূর অবস্থানে পৃথিবীর দূরত্ব কম থাকায় পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ বেড়ে যায়।
১২. আবর্তন গতি না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকত না কেন?
আবর্তন গতি না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকত না কারণ—
(i) পৃথিবীতে যদি আবর্তন গতি না থাকত তাহলে, পৃথিবীর একটি অংশে সর্বদাই আলােকিত থকততা ও অত্যাধিক উত্তাপের ফলে সেখানে জীবকুলের পরিবেশ সৃষ্টি হত না। এবং অপরদিকে সেখানে সূর্যের আলাে পৌছতে না সেখানে সর্বদাই অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকত ও অত্যাধিক শীতলতার জন্য প্রাণের অস্তিত্ব দেখা যেত না।
(ii) কেবলমাত্র ছায়াবৃত্তের অংশগুলিতেই প্রাণের অস্তিত্বের ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকত।
(iii) আবর্তন গতি না থাকলে উত্তাপের অসম বন্টনের ফলে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হত না।
১৩. পৃথিবীর আবর্তন গতিকে আহ্নিক গতিও বলা হয় কেন?
‘অহ্ন’ থেকে ‘আহ্নিক’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ‘অহ্ন’ শব্দের অর্থ হল দিন। পৃথিবীর নিজের মেরুদণ্ডের ওপর একবার সম্পূর্ণ ঘুরতে বা আবর্তন করতে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন। পৃথিবীর একবার আবর্তনের সময়কে ১ দিন বা ১ অহ্ন বলা হয়। তাই আবর্তন গতিকে আহ্নিক গতিও বলা হয়।
১৪. শীতকালে সূর্যকে একটু বড়াে ও গ্রীষ্মে সূর্যকে ছােটো দেখায় কেন?
জানুয়ারি মাসে পৃথিবীর অনুসূর অবস্থায় থাকার জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্ব অনেক কম থাকে ( ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি)। এই সময় সূর্য পৃথিবীর একটু কাছে থাকায় শীতকালে সূর্যকে একটু বড় দেখায়। অপরদিকে, গ্রীষ্মে জুলাই মাসে পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব একটু বেড়ে যায় ( ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি) ফলে পৃথিবী সূর্যের থেকে একটু দূরে অবস্থান করে বলে, প্রশ্নে সূর্যকে একটু ছােটো দেখায়।
১৫. নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর গ্রীষ্মকাল বিরাজমান কেন? অথবা নিরক্ষীয় অঞ্চলে ঋতু পরিবর্তন হয় না কেন?
নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় সারাবছরই সূর্যরশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেয়। লম্ব সূর্যরশ্মি বায়ুমণ্ডলের ওপর দিয়ে আসার সময় কম দূরত্ব অতিক্রম করে ও ভূপৃষ্ঠে অল্প স্থানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরফলে ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়। উত্তাপের এই আধিক্যের ফলে নিরক্ষীয় অঞলে। সারাবছরই গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে। এই অলে, দিন ও রাত্রির পরিমাণ সমান, উয়তার হ্রাসবৃদ্ধি হয় না, অত্যাধিক তাপের ফলে নিরক্ষীয় অঞলে ঋতু পরিবর্তনও অনুভূত হয় না।
উপসংহার
আজকের এই পোস্টে, আমরা আপনাকে “ একাদশ শ্রেণির ভূগোল প্রশ্ন উত্তর প্রথম অধ্যায় ” -এর সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে, আর আপনার যদি এই পোস্ট সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন থাকে তবে আপনি আমাদের কমেণ্টের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করতে পারেন